ক্যাপাডোসিয়ার বিধ্বস্ত পৃষ্ঠের ৮৫ মিটার নিচেই রয়েছ শতাব্দীর বিস্ময়

তুরস্কের একটি ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চল ক্যাপাডোসিয়া। হিংস দমকা হাওয়ায় বিস্তর ওড়াউড়ি করে ক্যাপাডোসিয়ার লাভ ভ্যালির লালচে ধুলা।

গোলাপি-হলুদ আভামাখা পাহাড়ের ঢালগুলো ওপাশ থেকে নেমে এসে ধাক্কা খেয়েছে গভীর লাল গিরিখাতের ওপর-একটু দূরেই দেখা যায় চিমিনিস্ট্যাকের শিলার গঠনগুলো। এখানে শুষ্ক, গরম বাতাস বিধ্বংসী হলেও যেন মনোরম।
এ যেন এক মাশরুম-আকৃতির ভাস্কর্য কিংবা বাতাস ভরা বেলুন। ক্যাপাডোসিয়ার এই বিধ্বস্ত পৃষ্ঠের ৮৫ মিটার নিচেই লুকিয়ে আছে শতাব্দীর বিস্ময়, এক সুবিশাল ভূগর্ভস্থ শহর। হাজার হাজার বছর ধরে অবিরামভাবে ব্যবহৃত ছিমছিম বিস্তৃত এ শহরে এখনো লুকিয়ে থাকতে পারবে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। বিবিসি।
এলেংগুবু এখন ডেরিঙ্কুউ নামে পরিচিত। এটি বিশ্বের বৃহত্তম খননকৃত ভূগর্ভস্থ শহর। এখানে রয়েছে ১৮টি স্তরের টানেল। ফ্রিজিয়ানদের থেকে পারস্য এবং এরপর বাইজেন্টান যুগের খ্রিষ্টানদের হাতে লালিত হয় শহরটি।
১৯২০-এর দশকে গ্রিকো-তুর্কি যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ক্যাপাডোসিয়া ছেড়ে গ্রিসে পালায় তারা। এর গুহার মতো ঘরগুলো কয়েকশ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। মনে করা হয় এই অঞ্চলে আবিষ্কৃত ২০০টিরও বেশি ছোট, পৃথক ভূগর্ভস্থ অলি-গলি শহরগুলো এই সুড়ঙ্গপথের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে-যা হয়তো বিস্তৃত ভূগর্ভস্থ নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে।
স্থানীয় গাইড সুলেমানের মতে, ১৯৬৩ সালে একজন বেনামি স্থানীয় তার হারিয়ে যাওয়া মুরগি খুঁজতে গিয়ে এটি পুনঃআবিষ্কার করেন।
এই বক্তব্যের সূত্র ধরে, আরও ভালোভাবে তদন্ত এবং কিছু খনন করার পর, একটি অন্ধকার পথের সন্ধান পায় তুরস্ক কর্তৃপক্ষ। ওই পথে যেতে যেতেই তারা খুঁজে পান ৬০০টিরও বেশি প্রবেশদ্বার। ভূগর্ভস্থ বাসস্থান, শুকনো খাবার সঞ্চায়ন, গবাদিপশুর আস্তাবল, স্কুল, ধর্মশালা-কী নেই সেখানে। ১৯৮৫ সালে অঞ্চলটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দেয় ইউনেস্কো।
শহরটি নির্মাণের সঠিক তারিখ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে এথেন্সের ইতিহাসবিদ জোনোফোন রচিত একটি বইয়ে এই অঞ্চলের কিছু ইঙ্গিত উল্লেখ করেছিলেন-সেখানে ৩৭০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে লেখা হয়েছিল।
ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্লাসিক্যাল স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক আন্দ্রেয়া বলেন, ‘ডেরিঙ্কুউ সৃষ্টির কৃতিত্ব কাকে দেবেন-তা একটি আংশিক রহস্যই রয়ে গেছে। ভূমধ্যসাগরীয় গুহাগুলোর বিস্তৃত নেটওয়ার্কের ভিত্তি প্রায়ই হিট্টাইটদের বলে মনে করা হয়-যারা ১২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে ফ্রিজিয়ানদের আক্রমণের শিকার হওয়ার সময় পাথরের প্রথম কয়েকটি স্তর খনন করতে পারে।’