ডলার কারসাজিতে জড়িত
ছয় ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধান বরখাস্ত
৬ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ

ডলার কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশি-বিদেশি ৬টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে অপসারণ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (৮ আগস্ট) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। তবে তিনি ব্যাংকগুলোর নাম জানাননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিঠি দেওয়া ব্যাংকগুলোর তালিকায় বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংক এবং বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক রয়েছে। এসব ব্যাংক প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেছে। এমন প্রমাণ পাওয়ায় তাদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে।
এদিকে, খোলা বাজারে আজ ১১৫ টাকায় পৌঁছেছে ডলারের দাম, যা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত আন্তঃব্যাংক দরের চেয়ে অনেক বেশি। আন্তঃব্যাংক ডলার দর আজ ছিল ৯৫ টাকা।
ডলারের বাজার অস্থিতিশীল করে অতিরিক্ত মুনাফা করায় দেশি-বিদেশি ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে দায়িত্ব থেকে (বরখাস্ত) সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ট্রেজারি বিভাগ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের টাকা ও ডলারের দৈনন্দিন জোগান ও চাহিদার বিষয়টির দায়িত্বে থাকে। কোন কোন ব্যাংকে ট্রেজারিপ্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন ঐ ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদের কর্মকর্তাও। সে ক্ষেত্রে তিনিও ঐ পদ থেকে অব্যাহতি পাচ্ছেন।
গত কিছুদিন ধরে ডলারের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো পরিদর্শনে গিয়ে ডলার কেনাবেচার তথ্য উপাত্ব বিশ্লেষন করে অনিয়মের প্রমান পায়। তাতে দেখা যায়, ৬ ব্যাংকের কোনো কোনোটি ডলার কেনাবেচা করে গত মে মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করেছে। যার মাধ্যমে ডলার বাজারকে আরও অস্থিতিশীল করে তোলা হয় বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ছয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল অভিযুক্ত ব্যাংকগুলোতে নিরীক্ষা করে ডলার বাজার অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন কারসাজির প্রমান পেয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক উচ্চমুল্যে ডলার বিক্রি করে অস্বাভাবিক মুনাফা করেছে। এ জন্য তাদের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মূলত ট্রেজারি প্রধানগণই এ ডলার কেলেংকারির সাথে সরাসরি জড়িত আছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে একসঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের ছয় ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ ছয় কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। এর আগে ২০০২ সালে ওম প্রকাশ আগরওয়াল নামের এক ব্যবসায়ী জালিয়াতির মাধ্যমে ৫টি ব্যাংক থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ওই ঘটনায় একসঙ্গে পাঁচ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) বাংলাদেশ ব্যাংক অপসারণ করেছিল।
আমদানি খরচ বাড়ায় গত মে মাস থেকে দেশে ডলারের সংকট চলছে। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে আমদানি দায় শোধ করা যাচ্ছে না। এর ফলে বেড়ে গেছে ডলারের দাম। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম গত তিন মাসে আন্তব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে ৮৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। তবে ওই দামে শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকই ডলার বিক্রি করছে। অন্যান্য ব্যাংকে ডলার লেনদেন হচ্ছে আরও বেশি দামে।
ইদানিং বিভিন্ন ব্যাংক প্রবাসী রেমিটেন্স আনছে ১১২-১১৩ টাকায়। আর রপ্তানি বিল নগদায়ন হচ্ছে ১০৪-১০৫ টাকায়। ফলে আমদানিকারকদের ঋণপত্র নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম রাখা হচ্ছে ১০৭-১০৮ টাকা। এদিকে খোলাবাজারে সোমবার প্রতি ডলারের দাম উঠেছে ১১৫ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত।
এতে পরিস্থিতি ক্রমশ নাজুক হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকের মতো খোলাবাজারেও ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ডলার নেই। অনেকে ডলার কিনে ধরে রাখতে চাইছে। এ জন্য লাগামহীন দাম বাড়ছে। এছাড়া প্রবাসীদের দেশে আসা কমেছে, বিদেশি পর্যটকও কম আসছেন এখন। এ কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেশ কমে গেছে।
মার্কিন ডলারের সংকট আর জ্বালানী তেলের উচ্চমুল্য এ মূহুর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিষফোড়া হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এম/এস